Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

Title
উত্তাল মার্চ
Details

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নতুন করে প্রাণসঞ্চার করে বাঙালির আবেগে, আন্দোলনে। তার স্বাধীনতার ডাক পাল্টে দেয় গোটা পূর্ব পাকিস্তানের চিত্র। বাঙালির বিদ্রোহ-সংগ্রামের তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। শুরু হয় সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি।

মুক্তির জন্য উš§ুখ বাঙালির চোখ জ্বলে ওঠে স্বাধীনতার স্বপ্নে। হতভম্ব হয়ে পড়ে পাকিস্তানের সামরিকজান্তা। ব্যর্থ হয় বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বানিয়ে আন্দোলন নস্যাতের শেষ পরিকল্পনাটুকুও। ক্ষোভে-অপমানে তাই শেষ পর্যন্ত বেছে নেয় হত্যাযজ্ঞের পথ। আঁটতে থাকে বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলন দমনের নীলনকশা।

আজ ৮ মার্চ। রেডিও, টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচারের দাবি নিয়েই শুরু হয় বাঙালির দিন চলা। উত্তাল বিক্ষোভে শেষ পর্যন্ত দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় সরকার। সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দিয়েই শুরু হয় ঢাকা বেতার কেন্দ্রের কার্যক্রম। রিলে করা হয় প্রদেশের অন্যান্য বেতার কেন্দ্র থেকেও। কাজে যোগ দেন বেতারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বেতার ও টেলিভিশনে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা প্রদর্শন বন্ধ হয়ে যায়। অলিগলি, পাড়া-মহল্লা, বাসভবন, ছাত্রাবাস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভবনের চূড়া ও ব্যক্তিগত যানে উড়িয়ে দেওয়া হয় কালো পতাকা। চলতে থাকে বিক্ষোভ মিছিল, সভা-সমাবেশ। আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হতে থাকে বঙ্গবন্ধুর সেই দৃপ্ত কণ্ঠস্বরÑ ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’।

পূর্ব পাকিস্তানে তখন অক্ষরে অক্ষরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পালনে উত্তাল বাঙালি। ৭ মার্চের ভাষণের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে যুক্ত বিবৃতি দেন ছাত্রলীগের সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর সহসভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন। পৃথক এক বিবৃতিতে সব সরকারি-বেসরকারি ভবনে অনির্দিষ্টকালের জন্য কালো পতাকা উত্তোলনেরও আহ্বান জানান তারা। পিডিপির সভাপতি নুরুল আমীন, মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুর, জাতীয় লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান, ওয়ালীপন্থী ন্যাপের প্রাদেশিক সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদসহ পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাও পৃথক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর সব শর্ত মেনে নিতে আহ্বান জানান প্রেডিডেন্ট ইয়াহিয়াকে। গণঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) এম আসগর খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ধানম-ির বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। বেতার-টেলিভিশনের শিল্পীরাও সাক্ষাৎ করে ১০ মার্চ থেকে বেতার ও টেলিভিশনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শুরু হয় সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের কর্মবিরতি।

রাতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, ব্যাংকগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের ভেতর নগদ জমা, বেতন ও মজুরি প্রদান এবং সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পর্যন্ত তুলতে পারবে। স্টেট ব্যাংক বা অন্য কোনো মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের বাইরে টাকা পাঠানো যাবে না। দেশের ভেতর চিঠিপত্র, টেলিগ্রাম ও মানিঅর্ডারের জন্য ডাক ও তার এবং পানি ও বিদ্যুৎ বিভাগ খোলা থাকবে। পাওয়ার পাম্পের জন্য ডিজেল সরবরাহ চলবে। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে। আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে হরতাল অব্যাহত থাকবে। অপর এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান তিনি। লাহোরে সাবেক তথ্যমন্ত্রী নওয়াবজাদা শের আলী খান ও পিডিপির পশ্চিম পাকিস্তান প্রধান নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে ঢাকা যাওয়ার অনুরোধ করেন। ব্রিটেন প্রবাসী প্রায় ১০ হাজার বাঙালি লন্ডনের পাকিস্তান হাইকমিশনের সামনে স্বাধীন বাংলার দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

Images
Attachments