স্বপ্নপূরণে একধাপ এগোল পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর। গত চার মাসে এই খাত থেকে সরকারের রাজস্ব এসেছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর দেশের ৩য় বন্দর ঘিরে তাই নতুন সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী ২০২৩ সালে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যক্রম শুরু হলে দেশের অর্থনীতিতে বড় রকমের অবদান রাখতে পারবে বন্দরটি। তবে বন্দরকে ঘিরে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যার মধ্যে জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগ উল্লেখযোগ্য।
সম্প্রতি পায়রা বন্দরের সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের কাছে উপস্থাপন করা হয়। উপস্থাপিত নথি পর্যালোচনা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, নতুন সম্ভাবনার নাম পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর। গত আগস্ট মাসে কম পরিসরে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করার পর ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে
১০টি জাহাজ পাথর, সিমেন্ট ক্লিংকার ও ড্রেজিং যন্ত্রপাতি নিয়ে এ বন্দরে এসেছে। এ থেকে বন্দরের আয় হয়েছে ৫১ লাখ আট হাজার টাকা এবং সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ব্যাপক পরিসরে কার্যক্রম শুরু করা গেলে এই বন্দরই অর্থনীতিতে অনেক বেশি অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।
নথির তথ্যমতে, দেশের তৃতীয় বন্দর হিসেবে অপারেশন কার্যক্রম শুরু হয় গত ১৩ আগস্ট ২০১৬। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই বন্দরের উদ্বোধন করেন। তখন পটুয়াখালীর রামনাবাদ চ্যানেলে অবস্থিত পায়র বন্দরে উপস্থিত ছিলেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। এর মধ্য দিয়েই সম্ভাবনাময় বন্দরটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়।
জানা গেছে, স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী, ধাপে ধাপে পায়র বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দরে রূপান্তরের পরিকল্পনা হাতে নেয় সরকার। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে ছিল ২০১৬ সালের মধ্যে বন্দরের কার্যক্রম সীমিত পরিসরে শুরু করা। সেটি শুরু হয়েছে। কার্যক্রম এগিয়ে নিতে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ; যার মধ্যে ১২ হাজার বর্গফুটের অফিস ভবন নির্মাণ, বিদেশি জাহাজে প্রতি ঘণ্টায় ২৫০ টন পানি সরবরাহের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন, বহিঃনোঙরে আগত বৈদেশিক বাণিজ্যিক জাহাজ ও অন্যান্য লাইটারেজ জাহাজের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপনে পোর্ট রেডিও কন্ট্রোল (ভিএইচপি) স্টেশন ও টাওয়ার স্থাপন ও এক হাজার কেভিএ বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় এখন চলছে নৌপথ জরিপের কাজ।
এদিকে, মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার কাজও চলমান রয়েছে। ক্ষুদ্র পরিসরে বন্দর পরিচালনার জন্য হেভি ডিউটি স্পিডবোট ছাড়া একটি করে টাগবোট, বায়ালেয়িং ভেসেল ও জরিপ বোট এবং দুটি করে পাইলট ভেসেল, হাইস্পিড প্যাট্রোল বোট ও পন্টুন নির্মাণ হবে, যার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটে (কাজল-তেতুলিয়া) ২৪ঘণ্টা নৌ চলাচলের জন্য ড্রেজিংয়ের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের নৌবাহিনীর এ-সংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে ৮১ লাখ ঘন মিটার ড্রেজিং কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
তবে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে জমি অধিগ্রহণ ছিল সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ। বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দরকার হবে সাত হাজার একর জমি অধিগ্রহণ এখন পর্যন্ত মাত্র ৫৮ একর অধিগগ্রহণ হয়েছে। আর এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আদালতে ৬ ধারা রুজু হওয়ায়। বাকি পাঁচ হাজার একশ একর জমি পর্যায়ক্রমে অধিগ্রহণ করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আর মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে ১০মিটার গভীরতার চ্যানেল ড্রেজিং, একটি মাল্টিপারপাস ও একটি বাল্ক টার্মিনালসহ বন্দর অবকাঠামো তৈরি করে বন্দর কার্যক্রম শুরু করা। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে ১৬ মিটার গভীরতায় চ্যানেল ড্রেজিং সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ বন্দর সুবিধা গড়ে তোলা।
তবে বন্দরের এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জমি অধিগ্রহণ ছাড়াও জনবল নিয়োগ, পুনর্বাসন এবং রজপাড়া-পায়রা সমুদ্রবন্দর সড়কের সার্ভিস রোড নির্মাণ-সংক্রান্ত প্রাক্কলিত মূল্যবৃদ্ধির লক্ষ্যে ডিপিপিতে সংশোধন আনা। এ ছাড়া সীমিত পরিসরে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হলেও টাগবোট, পাইলট বোট ও বয়লেয়িং ভ্যাসেল না থাকায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এটি ক্রয়ের উদ্যোগ নিলে তা বাস্তবায়নে সময় লাগবে প্রায় ১৮মাস।
তা ছাড়া এই বন্দরটি ফার্স্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্প হওয়া সত্ত্বেও পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে এখনো আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ হয়নি, যা সম্ভাবনায় এই বন্দরের গতিতে কিছুটা ভাটা পড়ছে বলে জানিয়েছেন পায়রা বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস